কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া স্থানীয় মাতব্বর ও প্রতিবেশীর ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র মানুষিক প্রতিবন্ধী যুবতীর কন্যা সন্তান প্রসব! নবজাতকের প্রাণ বাঁচাতে দত্তক দিয়েও অভিযুক্তদের হুমকি ধামকিতে আতংকে দিন কাটাচ্ছে ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারার।
ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা ইউপির খলিফাপাড়া এলাকায়। জানা যায়, হতদরিদ্র হাকিম মিয়ার মানুষিক প্রতিবন্ধী কন্যাকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণের অভিযোগ প্রতিবেশী মাতব্বর কালন মিয়া (৫৫) ও মিজান (৩০) নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ধর্ষণের শিকার যুবতী গর্ভবতী হওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হলে, ধামাচাপা দিতে অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে মিমাংসার নামে প্রহসন ও নানা ভাবে হয়রানি করেছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ।
এদিকে ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধী ঐ যুবতী গত কিছুদিন আগে কন্যা সন্তান প্রসব করে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, নির্যাতিত প্রতিবন্ধী নবজাতকের মা সহ পরিবারের সদস্যদের নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে অভিযুক্তরা। এতে আতংকে রয়েছে ভুক্তভোগী বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যরা। ধর্ষিত ও তার নবজাতক কন্যার জীবন নিয়ে শঙ্কিত পরিবার নবজাতকে পার্শ্ববর্তী কসবা উপজেলায় নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দিয়েছেন। নির্যাতিতার পরিবারের বরাত দিয়ে জানা গেছে। শালিস ও মিমাংসার আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করে উল্টো মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানিসহ তাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হতদরিদ্র বৃদ্ধা হাকিম মিয়া ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের।
এ ঘটনায় গত ১১ নভেম্বর নির্যাতিতার ভাই সবুজ মিয়া বাদী হয়ে চন্দলা দক্ষিণপাড়া এলাকার জাবেদ মিয়ার ছেলে কালন ও এরশাদ মিয়ার ছেলে মিজান এর বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মামলা দায়ের করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগটি আমলে নিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বিজ্ঞ আদালত। মামলা দায়েরের পর থেকেই ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের হুমকি ধামকি ও হামলার ভয়ে আতংকে রয়েছেন তারা। তাদের অভিযোগ, এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় অভিযুক্তরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে এবং পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করবে বলে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সুবিচারের নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছেন ভুক্তভোগী হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এবিষয়ে স্থানীয় ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাবেদ মিয়া বলেন, গুরুতর অপরাধের এ ঘটনা সামজিক ভাবে মিমাংসার যোগ্য নয়। তবুও ভবিষ্যৎ বিবেচনায় স্থানীয় এলাকার গণ্যমানরা একাধিক বার শালিসের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেছে। তবে সমাধান করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবন্ধী নির্যাতিতা যুবতী মানুষিক ভাবে অসুস্থ এবং সরকারী ভাবে ভাতা প্রাপ্ত। স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় অভিযুক্তরা হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে নানা হয়রানি করছে এবং হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছি নির্যাতিতার পরিবারকে। আদালতে মামলা করেছে বলে জেনেছি নির্যাতত প্রতিবন্ধী নারীর ভাই সবুজ মিয়া।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, আসামীরা এলাকায় নেই। পলাতক থাকায় এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ভিকটিমের পরিবারের মাধ্যমে নবজাতকের আজ তাদের ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে।
ভিকটিম মানুষিক প্রতিবন্ধি হওয়ায় আপাতত নবজাতকে নিঃসন্তান সেই দম্পতির জিম্মায় রাখা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। আশাকরি তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই আসামীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।